December 22, 2024, 10:07 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
পারমাণবিক জ্বালানি পেয়েছে রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ফলে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৩তম পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবহারকারী ও দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবহারকারী রাষ্ট্র।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ পারমাণবিক জ্বালানি গ্রহণ করেছে।
রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র (আরএনপিপি) সাইটে একটি অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের কাছে জ্বালানি সরবরাহের সনদ ও জ্বালানি সমাবেশের মডেল হস্তান্তর করেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন উভয়েই ভার্চুয়ালি যোগদান করেন। রোসাটম ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে। এর ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিটটি আগামী বছর এবং অপর ইউনিটটি ২০২৫ সালে চালু হবে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসিও এ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।
শুরুতে, আরএনপিপির প্রথম ব্যাচের পারমাণবিক জ্বালানির উৎপাদন ও বিতরণের ওপর একটি অডিও-ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়- যেখানে আরএনপিপি প্রকল্প পরিচালক এবং এনপিসিবিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. শওকত আকবর আরএনপিপির পরিচিতি তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব মো. আলী হোসেন।
একটি বিশেষ ফ্লাইটে গত ২৮ সেপ্টেম্বর আরএনপিপি-র জন্য পারমাণবিক জ্বালানির প্রথম চালান (ইউরেনিয়াম রড) এখানে এসে পৌঁছায়।
প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, সরকার আশা করছে যে, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটটি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ও দ্বিতীয় ইউনিটটি ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে চালু করা যাবে।
প্রকল্পটিতে ৭ হাজার পেশাদারসহ ৩০ হাজার কর্মী কাজ করছে। প্রকল্পটি ৬০-৮০ বছর ধরে সচল থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কর্মকর্তারা বলেছেন, এই আরএনপিপি পারমাণবিক ক্লাবে প্রবেশের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবে। কারণ, এটি কার্বন নির্গমন হ্রাস লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হওয়ার পাশাপাশি ফ্ল্যাশের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমিয়ে দেবে।
প্রকল্পের লেআউটে বলা হয়েছে, আরএনপিপি প্রতিদিন ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার এসোসিয়েশনের ওয়েবসাইট অনুসারে, পরমাণু শক্তি ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, ইউক্রেন, জার্মানি, জাপান, স্পেন, সুইডেন, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, ভারত, চেক প্রজাতন্ত্র, ফিনল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, বুলগেরিয়া, পাকিস্তান, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো, রোমানিয়া, আর্জেন্টিনা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বেলারুশ, স্লোভেনিয়া, নেদারল্যান্ডস, ইরান ও আর্মেনিয়া।
একবার পারমাণবিক জ্বালানী বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের চুল্লিতে লোড করা হলে, এক বছরের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে। এর পরে, জ্বালানী চুল্লিতে পুনরায় লোড করতে হবে। ২০২১ সালের অক্টোবরে, ইউনিটের কাঠামোর মধ্যে চুল্লি স্থাপনের মাধ্যমে রূপপুর ইউনিট-১ প্রায় সম্পন্ন হয়। এটি আইএইএ’র মান অনুযায়ী স্থাপন করা হয়েছে। চুল্লি একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান উপাদান। গত বছরের অক্টোবরে দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি স্থাপন করা হয়।
আইএইএ’র নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সকল প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে রূপপুর প্রকল্পে পারমাণবিক জ্বালানি আমদানি ও স্টোরেজের লাইসেন্স পেয়েছে বাংলাদেশ। আইএইএ গত মাসে ভিয়েনায় তার সাধারণ সম্মেলনের সময় বাংলাদেশকে আইএইএ’র বোর্ড সদস্য করে।
পারমাণবিক শক্তি আমরা শান্তিরক্ষায় ব্যবহার করব : প্রধানমন্ত্রী
পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ পদক্ষেপ বাস্তবায়নের প্রতি অঙ্গীকার ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পারমাণবিক শক্তি আমরা শান্তিরক্ষায় ব্যবহার করব। বাংলাদেশে আমরা পরমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করেছি। একটি স্বাধীন পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষও প্রতিষ্ঠা করেছি।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও ভার্চুয়ালি যুক্ত হন এবং বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ২০১৩ সালে প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছি। আপনার সহযোগিতায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনুষ্ঠানে যারা উপস্থিত হয়েছেন তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আজ বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত গর্বের দিন। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচেষ্টায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সফলতার মুখ দেখছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বন্ধুপ্রতিম দেশ রাশিয়ার সহযোগিতায় আমরা সেই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করেছি।’
রূপপুর প্রকল্প সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও গভীর করেছে : পুতিন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ ধাপে উত্তরণ উপলক্ষ্যে আমি সবাইকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এ প্রকল্পে আমাদের দুই দেশের স্বার্থ জড়িত এবং এটি পারষ্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও গভীর করেছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশ আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। আমাদের সম্পর্ক সমতা, পরস্পরের জন্য শ্রদ্ধা ও পরষ্পরের স্বার্থ মেনে নেওয়ার ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সহায়তার মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এরপর থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাশিয়া কাজ করছে। বড় শিল্প ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়া সহায়তা করেছে। গত বছর কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছে দুই দেশ।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে রাশিয়া থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তাঁর বক্তব্য বাংলায় অনুবাদ করে শোনানো হয়।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালে রোসাটম বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে কাজ শুরু করে। গবেষণার কাজ শেষ হওযার পর ২০১৭ সালে চুল্লির প্রথম ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়। দুই ইউনিট বিশিষ্ট ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের উৎপাদন ২৪ সালে এবং দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন ২০২৬ সালে শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনে যাওয়ার পর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণে সক্ষম হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কার্বন নির্গমন করবে না, যা সামগ্রিক অর্থে একটি ভালো দিক।
Leave a Reply